আল-নাহিয়ান ট্রাস্টের উপ-তত্ত্বাবধায়ক ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

news paper

মনিরুজ্জামান মনি

প্রকাশিত: ১৫-৭-২০২৫ রাত ১০:৪৯

451Views

আল-নাহিয়ান ট্রাস্টের উপ-তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল হাকিম এবং হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মজিবুর রহমান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিজেরাই কমিটির সভাপতি হয়ে উচ্চতর গ্রেড নিয়ে প্রতি মাসে এতিম নিবাসীদের বরাদ্দ থেকে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা লুফে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নবম গ্রেড থেকে একলাফে পঞ্চম গ্রেড নিয়ে মীর মজিবুর রহমান ভূঁইয়া রাতারাতি ৫টি দোকান ও ছয়তলা বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার স্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা করিয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত ট্রাস্টের কোনো অডিট করা হয়নি বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

এমন গুরুতর অভিযোগের পরেও অভিযুক্ত বর্তমান লালমনিরহাট শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল হাকিম এবং তার সহযোগী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মজিবুর রহমান ভূঁইয়া বহাল তবিয়তে আছেন। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানে (নাহিয়ান ট্রাস্ট) একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে খাদ্য ঠিকাদারের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং বনানী মার্কেটের দোকান মালিকদের সাথে ভাড়া না বাড়িয়ে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে। এমনকি ড্রাইভার থেকে পিয়ন পর্যন্ত সকলেই এই সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত। অনুসন্ধানে জানা যায়, এদের কারণে কোনো ভালো নির্বাহী পরিচালক বেশিদিন টিকতে পারেন না, তাদেরকে দুর্বিষহ করে কৌশলে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

লালমনিরহাটের শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল হাকিমকে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে আখ্যায়িত করে বলা হয়েছে, তার দুর্নীতি পাহাড় সমান এবং নারী কেলেঙ্কারি থেকে টাকা আত্মসাৎ সবই তিনি পারেন। তার অন্যতম সহযোগী পিয়ন মুসলিম উদ্দিন আহমেদ, যার কোটি টাকা ব্যাংক ব্যালেন্স রয়েছে বলেও অভিযোগ। নিম্নমান সহকারী অমল কৃষ্ণপালের বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে প্রতি মাসে পানি, বিদ্যুৎ বিল তুলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ট্রাস্ট বাংলাদেশ তথা আল-নাহিয়ান ট্রাস্টের উপ-তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল হাকিম ও অ্যাকাউন্টস অফিসার মজিবুর রহমান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, ছাত্রদের মারধর ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে নির্বাহী পরিচালক (উপ-সচিব) বরাবর অভিযোগ দাখিলের পরও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ভুক্তভোগী শিক্ষক ও ছাত্রবৃন্দ হতাশা প্রকাশ করেছেন।

অভিযোগে আল-নাহিয়ান শিশুদের পরিবার মিরপুর, ঢাকার সাবেক অবৈধ ও বর্তমান লালমনিরহাট শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল হাকিমের অবৈধ কার্যকলাপ, অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত করে কঠোর শাস্তির আবেদন করা হয়েছে। ৪৭টি তথ্য দিয়ে আবেদন করার পরও উপ-তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল হাকিম ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মজিবুর রহমান ভূঁইয়া বহাল তবিয়তে আছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ছেলে পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড করত। তবে মন্ত্রীর বাসার কাজের বুয়া ছিলেন তার মা জোবেদা খাতুন। মিরপুর আল-নাহিয়ান উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্বাহী পরিচালকের অফিস রুমের এসি, ফ্রিজ সহ অফিসের ব্যবহারের আসবাবপত্র খুলে নিয়ে নিজ বাসায় ব্যবহারের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগে। অভিযোগে বিতর্কিত কর্মচারীদের টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া এবং ভালো কর্মচারীদের বিতর্কিত করে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগও করা হয়েছে। কম্পাউন্ডার ফিরোজ মোল্লার স্ত্রী মেহেরুন্নেছা পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চাকরি ফিরে পান বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

লালমনিরহাটে শিশু নিবাসে নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহে ঠিকাদারের কাছ থেকে মাসিক চুক্তিতে উৎকোচ গ্রহণ করা, রত্না ও শিউলি নামে দুইজন এতিম নিবাসীর বিয়ের আয়োজন করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং বিয়ে অনুষ্ঠানের উপহার পরিবারদ্বয়কে না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করা সহ অসংখ্য অভিযোগ তার বিরুদ্ধে রয়েছে। ঈদুল আজহার কোরবানির মাংস সামান্য বণ্টন করে সকল মাংস বিক্রির অভিযোগ আছে, এমনকি শিশু পরিবারের অনেক দামী দামী গাছ বিক্রি করেছেন রাতের আঁধারে। এত অভিযোগের পরও তিনি যেন ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন।

এ বিষয়ে উপ-তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল হাকিমের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মজিবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, "অভিযোগ দিয়েছে আমি শুনেছি। আপনার যদি আরও কোনো কথা থাকে তাহলে উপ-পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেন।"

এসকল অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ড্রাইভার হাবিব, পিয়ন মোসলেম উদ্দিন আহমেদ সহ নিম্নমান সহকারী অমল কৃষ্ণপালের সকল দুর্নীতির খবর থাকছে আগামী সংখ্যায়।


আরও পড়ুন