রাঙামাটিতে ব্যবসায়ীর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার, স্ত্রীসহ ঘাতক গ্রেফতার

news paper

মনু মারমা, রাঙামাটি

প্রকাশিত: ১৫-৭-২০২৫ বিকাল ৫:২২

55Views

রাঙামাটিতে অপহৃত পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মো. মামুন (২৫)-এর বস্তাবন্দী দ্বি-খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত মামুনের বাড়ি কাউখালী উপজেলার সুগারমিল আদর্শগ্রামে। অপহরণের আট দিন পর আজ (১৫ জুলাই) মঙ্গলবার সকালে পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মো. মামুনের বস্তাবন্দী দ্বি-খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করেছে কাউখালী থানা পুলিশ। সুগারমিল আদর্শগ্রাম এলাকার আলী আহমেদের একমাত্র সন্তান ছিলেন মো. মামুন।

তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নিহতের সাবেক কর্মচারী মূল ঘাতক মো. কামরুল ইসলামকে (৩০) লক্ষ্মীপুর জেলার ভবানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত কামরুলের স্ত্রীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপহরণ করে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হলেও, মুক্তিপণ দেওয়ার আগেই নিজের সাবেক কর্মচারীর হাতে নৃশংসভাবে খুন হলেন পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মামুন। এই ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের সুগারমিল আদর্শগ্রাম এলাকার পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মো. মামুন (৩৫) গত ৭ জুলাই বিকেল থেকে নিখোঁজ হন। ওই দিন রাতেই স্ত্রীকে ফোন করে মামুন তার ব্যাংকের ২টি চেক চট্টগ্রাম রানীরহাট বাজার এলাকার জনৈক ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিতে বলেন। স্ত্রীকে জানান, তিনি ঝামেলায় আছেন, চিন্তা না করতে। কিন্তু ঘাতক রাতেই চায়ের সাথে নেশাজাতীয় খাবার খাইয়ে তাকে অজ্ঞান করে হত্যা করে। এরপর থেকে পরিবারের কারো সাথে আর যোগাযোগ হয়নি মামুনের। ৮ জুলাই মামুনের স্ত্রীর ফোনে মামুনের নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয় মামুনকে অপহরণ করা হয়েছে এবং মুক্তিপণ হিসেবে দিতে হবে ১০ লক্ষ টাকা। একই দিনে কাউখালী থানায় মামুনের স্ত্রী নিখোঁজ ডায়রি করেন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় চেক গ্রহণ করা আনোয়ার (২০) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। আনোয়ারকে আটকের পর উঠে আসে অপহরণের সাথে জড়িত মামুনেরই সাবেক কর্মচারী কামরুলের নাম। মামুনের স্ত্রী জানান, ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে ফোন করেন কামরুল। কামরুল একই ইউনিয়নের ডাব্বুনিয়া এলাকার সেলিম সওদাগরের ছেলে। স্ত্রীকে নিয়ে তিনি রানীরহাট বাজার এলাকায় ৬তলা আবাসিক ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন।

কাউখালী থানায় মামুনের স্ত্রী জিডি করার পর নড়েচড়ে বসে কাউখালী থানা পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন এলাকায় কামরুলের সন্ধানে নামে। পরে গত সোমবার (১৪ জুলাই) লক্ষ্মীপুর জেলার ভবানীগঞ্জ থেকে এক বন্ধুর বাড়ি থেকে ঘাতক কামরুলকে গ্রেফতার করে কাউখালী থানায় নিয়ে আসলে মামুনের অপহরণের সন্ধান পায় পুলিশ।

কামরুলের স্বীকারোক্তি মোতাবেক আজ মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সকালে কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের মাঝের পাড়া এলাকায় বস্তাবন্দী করে মাটিতে পুঁতে রাখা অবস্থায় মামুনের লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। পুলিশ হেফাজতে ঘাতক কামরুল জানায়, মামুনকে রানীরহাট এলাকায় তার ভাড়া বাসায় স্ত্রীসহ চায়ের সাথে নেশাজাতীয় খাবার খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। পরে তাকে হত্যা করে লাশ দ্বি-খণ্ডিত করে স্ত্রীসহ বস্তায় ভরে গভীর জঙ্গলে মাটিচাপা দেয়।

কামরুলের স্বীকারোক্তি মোতাবেক এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তার স্ত্রী সাথী আক্তার (১৯)-কেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রাঙামাটি পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেন বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, "নিহত মামুনের সাবেক কর্মচারী ছিল ঘাতক কামরুল। কিন্তু কর্মচারী থাকলেও সম্প্রতি তারা দু'জনে মিলে শেয়ারে ব্যবসা করছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।"

নিহত মামুনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে তিন ও আট বছর বয়সী ছেলে এবং নয় মাস বয়সী মেয়ে।

কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম সোহাগ জানান, এ ব্যাপারে কাউখালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। কামরুলকে আদালতে উপস্থাপন করে রিমান্ড চাওয়া হবে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে কারা কারা জড়িত আছে সকলকে খুঁজে বের করা হবে।


আরও পড়ুন