নলছিটির দপদপিয়ায় চাঁদাবাজি ও দখলদারির অভিযোগে বিএনপির বিরুদ্ধে জনমনে চরম ক্ষোভ
প্রকাশিত: ১৪-৭-২০২৫ রাত ৯:৫৮
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নে বিএনপির একাধিক নেতার বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে জনসাধারণ চরমভাবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই দপদপিয়া ইউনিয়নে বিএনপির একটি প্রভাবশালী গ্রুপ চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি ও সহিংসতায় এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
প্রকাশ্যে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এমনকি সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পেও চাঁদা না পেলে হামলা ও লুটপাট করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ অফিস দখল করে বিএনপি অফিসে রূপান্তর
সরকার পরিবর্তনের পরপরই দপদপিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ অফিস দখল করে সেখানে বিএনপি অফিস স্থাপন করা হয়। অফিসের মালামাল লুটপাটের অভিযোগও উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, দখলকৃত অফিসে অগ্নিসংযোগের পরিকল্পনাও চলছে, যাতে করে নিরীহ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা যায়।
ব্যবসায়ী ও সরকারি প্রকল্প থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ
তোষক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ট্রাকচালক, এমনকি সরকারি প্রকল্পের উপকরণবাহী ট্রাক থেকেও চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে। “নলছিটি হাউজিং এস্টেট” প্রকল্পে ইট সরবরাহকারী ট্রাকগুলোকে আটকে রেখে চাঁদা দাবি করা হয়। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এসব ট্রাক ইট নামাতে পারলেও ভোগান্তিতে পড়েন সংশ্লিষ্টরা।
ইউপি সদস্যের কাছ থেকে অর্থ ছিনতাই
২০২৪ সালের ৪ জুন রাতে এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামরুল হাসানের কাছ থেকে ভিজিএফ কার্ড ও ৫২ হাজার ৫০০ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে টাকা ও কাগজপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও পুলিশের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
চেয়ারম্যানের কাছে চাঁদা দাবি, পরিষদে তালা
দপদপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বাবুল মৃধার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন তিনি নিজে। চাঁদা না পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদে তালা লাগিয়ে পরিষদ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকিও এসেছে বলে জানান তিনি।
জনদুর্ভোগ চরমে, প্রশাসন নীরব
পরিষদ বন্ধ থাকায় জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, সামাজিক নিরাপত্তা সহায়তা ও অন্যান্য নাগরিক সেবার কাজ বন্ধ রয়েছে। সংরক্ষিত নারী সদস্য ও সাধারণ সদস্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়রা বলছেন, জনগণের জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধি যদি এভাবে চাপে থাকেন, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?
অভিযুক্তদের বক্তব্য
অভিযোগের বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নাজমুল আহসান নান্টু মল্লিক সাংবাদিকদের জানান, “চাঁদার কোনো প্রশ্নই আসে না। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকেই আন্দোলন শুরু হয়েছে।”
দপদপিয়ার জনজীবন আজ আতঙ্কিত। এলাকাবাসীর দাবি—চাঁদাবাজি, দখলদারি ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।