ডিপিডিসি দুর্নীতি পর্ব-১
প্রকৌশলী কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
প্রকাশিত: ১৪-৭-২০২৫ রাত ৯:৫৬
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), যা ২০০৫ সালের ২৫ অক্টোবর কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৮ সালের ১ জুলাই থেকে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকার গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিতরণ পরিচালনা করছে, সেখানে দুর্নীতি একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ডিপিডিসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, মিটার টেম্পারিং এবং ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে অর্থোপার্জন। কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগও রয়েছে।
ডিপিডিসির মাঠপর্যায়ে অবৈধ সংযোগ, মিটার টেম্পারিং এবং বিল কারচুপির মাধ্যমে অর্থ আদায় করা হয়। এছাড়া কিছু প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের অভিযোগ অনেক পুরোনো। কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রাহকদের হয়রানি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্য, পদোন্নতি বাণিজ্য এবং টেন্ডার দুর্নীতির অভিযোগও পাওয়া যায়। এমনকি ডিপিডিসির কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ডিপিডিসির দুর্নীতি কেবল আর্থিক ক্ষতির কারণ নয়, এটি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে এবং জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
সম্প্রতি ডিপিডিসি মাতুয়াইল এনওসিএস-এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ 'অবৈধ' সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। চাকরি জীবনে তিনি যা বেতন পেয়েছেন, তার অর্জিত সম্পদের পরিমাণের সঙ্গে বিশাল অমিল রয়েছে। এ কারণে পুরো ডিপিডিসি সহ তার নিজ এলাকায় ব্যাপক কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে যে, তিনি কিভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন।
কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুদকে দাখিল করা এক অভিযোগ থেকে জানা যায়, গ্রাহক হয়রানি, টাকা ছাড়া ফাইল না ছাড়া, কাগজপত্রে কোনো ঘাটতি না থাকা সত্ত্বেও নানা সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। জানা যায়, ইতোপূর্বে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের একজন দোসর ছিলেন এবং একসময় ছাত্রলীগও করতেন, কিন্তু ৫ আগস্টের পর ভোল পাল্টিয়ে রীতিমতো বিএনপি মনা হয়ে উঠেছেন।
নিয়মানুযায়ী একটি বাড়ির আয়তন ১২,৫০০ বর্গফুট এবং ৮০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ এর প্রয়োজন হলে উচ্চ লোডের এসটি লাইন নিতে হয়, সব মিলিয়ে খরচ লাগে প্রায় ৪ লক্ষ টাকার মতো। কিন্তু মাতুয়াইলের এই অফিসে গুণতে হয় ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা, যার পুরোটাই লেনদেন করতে হয় কামরুজ্জামানের হাত দিয়ে।
তার সম্পদের মধ্যে নিজ এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রানী দিয়া মৌজায় কিনেছেন প্রায় শত বিঘা আবাদি জমি। রাজধানীর হাতিরপুলে (বাসা নং ৩৫৯, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, হাতিরপুল, ঢাকা) রয়েছে একটি আলীশান ফ্ল্যাট, কাঁঠালবাগানে রয়েছে দুটি ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুর চন্দ্রিমায় কিনেছেন ৩টি ফ্ল্যাট। এছাড়াও ঝিগাতলায় আছে একটি বাড়ি, যেখানে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। অন্যদিকে, নিজে এবং পরিবার নিয়ে চলার জন্য কিনেছেন দুটি গাড়ি। রামপুরা বনশ্রীতে ডি ব্লকে ৫ তলা বিশিষ্ট একটি আলীশান বাড়ি আছে, যার আনুমানিক মূল্য এখন ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা। এছাড়াও, বনশ্রী এফ ব্লকে বাসা নং ৭৯/১/এফ মোল্লা ম্যানশনের দোতলায় ১,২০০ বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাট কিনেছেন তার স্ত্রীর নামে, যার বাজার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। অন্যদিকে, বসুন্ধরা সিটির ৫ তলায় বি ব্লকে দোকান নং ৫৯/বি এবং ৭৮/বি দুটি দোকান কিনেছেন স্ত্রীর নামে, যার বাজার মূল্য প্রায় দু'কোটি টাকা। দোকান দুটি ভাড়া দেওয়া আছে। এছাড়াও স্ত্রীসহ নিকটাত্মীয়দের নামে ব্যাংকে রেখেছেন বিপুল পরিমাণ টাকা। এই সকল বিষয়ে সরেজমিন তার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি রাজি হননি।