যমুনা নদীতে নিষিদ্ধ "চায়না দুয়ারি জাল" এর অবাধ ব্যবহার

news paper

বুলবুল হাসান, বেড়া

প্রকাশিত: ১৪-৭-২০২৫ দুপুর ৪:৩৯

13Views

পাবনার বেড়া উপজেলার যমুনা নদীতে বর্তমানে নিষিদ্ধ "চায়না দুয়ারি জাল" এর ব্যাপক ব্যবহার দেখা যাচ্ছে, যা মাছের প্রজনন মৌসুমেও অবাধে চলছে। বর্ষার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে এর ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে, যার ফলে দেশি প্রজাতির মাছ এবং অন্যান্য জলজ জীবের অস্তিত্ব মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে। সাধারণ জনগণ এই বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারির অভাবকেই দুষছেন। অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে ভবিষ্যতে দেশীয় প্রজাতির মাছসহ অন্যান্য জলজ জীব বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বর্ষার পানি বৃদ্ধি-হ্রাস এবং মাছের প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা শিং, বেলে, বোয়াল, শোল, টাকি, চিংড়ি, পুঁটি, ট্যাংরা, কইসহ দেশি প্রজাতির সব মাছ এই চায়না দুয়ারি জালে নিধন হচ্ছে। এর ফলস্বরূপ, উপজেলার নদী-নালা ও খাল-বিল ক্রমেই মাছশূন্য হয়ে পড়ছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বেড়া উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবাধে এই জাল ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু যমুনা নদীতেই নয়, আশেপাশের খাল-বিলগুলোতেও চলছে চায়না জাল ব্যবহারের মহোৎসব। ভোর থেকে রাত অব্দি এই জাল পাতার ধুম পড়ে যায় নগরবাড়ি, ইসলামপুর, কাজিরহাট, বসন্তপুর, পূর্বশ্রীকন্ঠদিয়া, চর সাফূল্লা, আগবাগসোয়া, বাটিয়াখড়া, মরিচাপাড়া, আউয়াল বাঁধ, জয়নগর, নাকালিয়া, পেঁচাকোলা, মোহনগঞ্জ, চরনাগদার সহ যমুনা নদীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোতে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিটি ঘরে-ঘরে এখন চায়না জাল। সহজে মাছ ধরা যায় বলে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে নতুন ভারেঙ্গার বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, এই জালের ধোঁকায় পড়ে দেশ থেকে সকল প্রজাতির মাছ, কুঁচিয়া, শামুক, জোঁক, পোনামাছ, কাঁকড়া, কচ্ছপ এবং বিভিন্ন জলজ প্রাণী বিলুপ্ত হতে চলেছে। নদী ও বিলের সকল প্রান্তে এই জলজ প্রজাতি ধ্বংসের মরণ ফাঁদ দেখা যায়। মৎস্যজীবী রামপদ হালদার বলেন, এই চায়না দুয়ারি জালের ফাঁদের কারণে নদী-নালা জলাশয়গুলো দিন দিন মাছশূন্য হয়ে পড়ছে। আগে যমুনা নদীতে সারা বছর অনেক মাছ পাওয়া গেলেও এখন বর্ষায়ও মাছ নেই।

সমাজবিজ্ঞানের ভারেঙ্গা একাডেমির শিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পুষ্টির প্রধান উৎস সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্য যাতে বাস্তুসংস্থানের মাধ্যমে জীবকুলকে রক্ষা করা যায় এবং পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখার মহান ব্রত নিয়ে চায়না দুয়ারির বিরুদ্ধে প্রশাসনসহ সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। জলজ জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলা এই চায়না দুয়ারি নামক মরণ ফাঁদ নিয়ন্ত্রণে সুশীল সমাজের দায়িত্ব রয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. নাসির উদ্দিন জানান, মৎস্য সম্পদ রক্ষায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নৌ পুলিশের সাথে কথা বলে দ্রুতই অভিযান পরিচালনা করা হবে। চায়না দুয়ারি ব্যবহারের প্রভাবে ভবিষ্যতে দেশি প্রজাতির মাছ চরম অস্তিত্ব-সংকটে পড়বে। দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ভবিষ্য প্রজন্মের জন্য চায়না দুয়ারি ব্যবহার বন্ধে সকল কে আহবান জানান।


আরও পড়ুন