আশাশুনি ইউপি চেয়ারম্যান দীপঙ্করের বিরুদ্ধে জাল সনদ ও অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ
প্রকাশিত: ১৩-৭-২০২৫ দুপুর ৩:৪৩
আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপঙ্কর সরকার দ্বীপের বিরুদ্ধে জাল সনদ দিয়ে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, কাদাকাটি ইউনিয়নের মৃত রুহুল আমিন কন্ডাক্টরের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গত বছর ১৭.৫.২৩ ইং তারিখে মৃত রুহুল আমিন কন্ডাক্টরের একমাত্র সন্তান এস এম সাফায়েত সরোয়ার উল্লেখ করে, এক ছেলে এবং দুই মেয়েসহ তার নাম বাদ দিয়ে, মোটা অর্থের বিনিময়ে ভুয়া জাল নাগরিক সনদপত্র প্রদান করা হয়।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান দীপঙ্কর কুমার দ্বীপের মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, "আমি এ বিষয়ে তেমন কিছু জানি না। ওই এলাকার মেম্বার আমাকে সই করতে বলেছিল, আমি করে দিয়েছি।"
এছাড়া তার বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পের কাজ শেষ না করে টাকা লুটপাটের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।
অভিযোগ উঠেছে, বিগত অর্থবছরের আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে কাবিখা কর্মসূচির রাস্তা নির্মাণ কাজে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম রয়েছে। অসাধু কর্মকর্তাদের লুকোচুরি, প্রকল্পের সভাপতির ভূমিকা ও কাজের পরিণতি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী আরও জানান, "দুর্নীতিবাজ দীপঙ্কর কুমার দ্বীপ আওয়ামী লীগের দোসর, সে এখনো কিভাবে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকে?" এমন প্রশ্ন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষের কাছে।
কাদাকাটি সাতক্ষীরা জেলার প্রভাবশালী নেতাদের দিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে দীপঙ্কর কুমার দ্বীপ বাগিয়ে নেন কাদাকাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ। অভিযোগ রয়েছে যে, বিগত ১৬ বছরে সরকারি ইজারা জমি দখল করে প্রকল্পের কাজ না করে টাকা লুটপাট করে শত কোটি টাকার পাহাড় গড়েছেন তিনি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম জানান, "কাদাকাটি ইউপি চেয়ারম্যান দীপঙ্কর কুমার সরকার দ্বীপের নেতৃত্বে মহিলা মেম্বর গীতা রানীকে কাজ পাওয়াতে তিনি আমাদেরকে চাপ সৃষ্টি করতেন।" তিনি আরও জানান যে, (প্রকল্প সভাপতি) নামে টেংরাখালী হাই স্কুল থেকে শফিকের মৎস্য ঘের পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ (মাটির) কাজ শেষ হয়েছে। ৩০০ মিটার (১০ চেইন) রাস্তার কাজে ব্যয় বরাদ্দ ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
স্কুল থেকে শ্মশান ঘাট পর্যন্ত রাস্তার প্রস্থ ১২ ফিট, গ্লোবসহ ২২ ফিট ও গভীরতা ৫ ফিট করার কথা থাকলেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রস্থ (মাথা) প্রায় ১২ ফিট, গ্লোবসহ ১৫ থেকে ১৭ ফিট এবং উচ্চতা ৬ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ৩ ফিট করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ স্থানে দেড়-দুই ফিট করে করা হয়েছে। শ্মশান ঘাট থেকে সফিকের ঘের পর্যন্ত চওড়া (মাথা) ১০ ফিট, গ্লোবসহ ২০ ফিট ও উচ্চতা ৫ ফুট করে করার কথা থাকলেও তদস্থলে করা হয়েছে চওড়া (মাথা) ৭-৮ ফিট, গ্লোবসহ ১০-১১ ফিট ও উচ্চতা ৩-৪ ফিট করে। এছাড়া খাল খননের সময় রাস্তার পরে ও পাশে রাখা মাটি (যা খদের পাড় হিসাবে ড্রেজিং করে পৃথক প্রতিরক্ষা বাঁধ হওয়ার কথা) টেনে নিয়ে রাস্তায় বিছিয়ে দিয়ে রাস্তার কাজ করা হয়েছে।
এলাকাবাসীর যুগ যুগ ধরে রাস্তা নির্মাণের দাবি পূরণে সরকারি বরাদ্দে কাজ শুরু হলে মানুষের মনে স্বস্তি ফিরেছিল। কিন্তু তাদের স্বস্তিকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লোপাটের ঘটনা দেখে তাদের চোখ ছানাবড়া হতে বসেছে।
তাদের অভিযোগ ও জিজ্ঞাসা, "এহেন জলজ্যান্ত দুর্নীতি প্রকাশ্যে করার পরও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? এভাবে কাজ শেষ করা হলে সরকারের লক্ষ্য ব্যর্থ হবে এবং খুব দ্রুত রাস্তা পাকা করণের পরিবর্তে পুনরায় মাটির কাজ করা লাগবে।" এলাকার কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) অভিযোগ করে বলেন, "চেয়ারম্যান ইউনিয়নের বড় প্রকল্প ইউপি সদস্যদের সভাপতি না করে মহিলা মেম্বরদের সভাপতি করে নিজেই কাজ নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।" কোনো কোনো কাজ আবার মহিলা মেম্বর সভাপতি নামে থাকলেও তার অজ্ঞাতে কাজ করেন চেয়ারম্যান নিজে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
প্রকল্পের সভাপতি মহিলা মেম্বর গীতা রানী সাংবাদিকদের জানান, "চেয়ারম্যানকে নিয়ে তারা যৌথভাবে কাজটি করেছেন। কাজ দেখতে পিআইও সাহেব এসেছিলেন, ২/১ স্থানে সমস্যা থাকায় সেগুলো ঠিক করতে বললে তা ঠিক করা হয়েছে।" তিনি আরও বলেন, "কাজের সমস্ত টাকার চেক তারা নিয়েছেন। পিআইও বলেছিলেন, বসে আছেন কেন? চেক নিয়ে যান, তখন চেক নিয়ে এসেছি।"