২২ বছর পর চিতলমারী উপজেলা বিএনপির সম্মেলন: সভাপতি টুলু, সম্পাদক অপু
প্রকাশিত: ১২-৭-২০২৫ দুপুর ২:০
দীর্ঘ পঁচিশ বছর পর বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলা বিএনপির বহুল প্রত্যাশিত দ্বিবার্ষিক সম্মেলন বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। এদিন চিতলমারী উপজেলা চত্বর প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই সম্মেলনে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন সকাল থেকেই শুরু হয়, যেখানে বাগেরহাট জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দসহ কেন্দ্রীয় বিএনপির অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা দলের সাংগঠনিক গতিশীলতা, ভবিষ্যৎ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃত্ব প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। প্রধান বক্তা ছিলেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। বিশেষ বক্তা ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও নির্বাচন মনিটরিং টিম (বাগেরহাট-১) শমসের আলী মোহন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক খাদেম নিয়ামুল নাসির আলাপ, ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম, সদস্য মো. মনিরুল হক ফরাজী, সহকারী অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান হিরো। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ ওহিদুজ্জামান দিপু, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম.এ সালাম, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোজাফফর রহমান আলম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ কামরুল ইসলাম গোরা, জেলা বিএনপির সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ স্বপন, জেলা বিএনপির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ রানা সহ অনেকে। প্রথম অধিবেশনে উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক মমিনুল হক টুলু বিশ্বাসের সভাপতিত্বে উদ্বোধক, প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি ছাড়াও জেলা ও উপজেলার নেতারা বক্তব্য রাখেন।
জুমার নামাজের বিরতির পর দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। দুপুর ৩টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ পর্ব। উপজেলার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন থেকে আগত কাউন্সিলররা ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ভোট গ্রহণ শেষে রাত ৮টা থেকে শুরু হয় ভোট গণনা, যা চলে রাত পর্যন্ত। ফলাফলে বিজয়ী হিসেবে উঠে আসেন নতুন নেতৃত্ব: সভাপতি পদে মো. মমিনুল হক টুলু বিশ্বাস (চেয়ার প্রতীক) ২৪১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আহসান হাবিব ঠান্ডু (আনারস প্রতীক) পেয়েছেন ২২৩ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে শরিফুল হাসান অপু (ফুটবল প্রতীক) ২৪৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিপন মুন্সি (মোরগ প্রতীক) পেয়েছেন ২৩৬ ভোট। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট ফজলুল হক (মাছ প্রতীক) ২৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শফিকুল ইসলাম বাবু (সাইকেল প্রতীক) পেয়েছেন ১৭৫ ভোট।
নবনির্বাচিত সভাপতি মো. মমিনুল হক টুলু বিশ্বাস প্রতিক্রিয়ায় বলেন, "দীর্ঘদিন পর দলের এই সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচন হওয়ায় তৃণমূল পর্যায়ে এক নবজাগরণ ঘটবে। আমরা সকলে মিলে বিএনপিকে চিতলমারীতে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলবো।" নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শরিফুল হাসান অপু বলেন, "আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দলকে সুসংগঠিত করে আগামী দিনের আন্দোলন ও নির্বাচনে প্রস্তুত থাকবো।"
এদিকে, দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘ ২২ বছর পর এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে চিতলমারীতে বিএনপির রাজনীতিতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন ঘিরে উপজেলা জুড়ে সৃষ্টি হয় প্রাণচাঞ্চল্য। কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে দলীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের ফলে তৃণমূল পর্যায়ে গণতান্ত্রিক চর্চার দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন নেতারা। নবনির্বাচিত নেতাদের প্রতি দলের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই নেতৃত্ব আগামী দিনে চিতলমারী উপজেলা বিএনপিকে আরও সুসংগঠিত ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সহায়তা করবে।