তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গে বেপরোয়া সিগারেট কোম্পানি, সরকারের কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান

news paper

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

প্রকাশিত: ১০-৭-২০২৫ দুপুর ১:০

61Views

বাংলাদেশে বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানিগুলো রাজস্ব ফাঁকিসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দেশের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা তরুণ হওয়ায় তাদেরকে লক্ষ্য করে তামাক কোম্পানিগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য নানাভাবে আইন ভঙ্গ করছে। তরুণদের তামাকের ভোক্তা বানাতে সিগারেটের চটকদার বিজ্ঞাপন, ই-সিগারেটের প্রচারণা এবং খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করে এমআরপি আইন লঙ্ঘন করছে তারা। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও দেশের তরুণদের রক্ষায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই, ২০২৫) দুপুরে একটি আইন বিষয়ক পর্যালোচনা সভা শেষে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) একটি বিবৃতি দিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের সিগারেট বা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা হলে, খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ করা হলে এবং চায়ের দোকানকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে সেখানে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হলে নিম্ন আয়ের কোনো বিক্রেতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কারণ দেশে মাত্র ২.৪% ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রে শুধুমাত্র তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় হয় এবং দেশের মোট বিক্রয়কেন্দ্রগুলোর মধ্যে মাত্র ১৮.৫% বিক্রয়কেন্দ্র অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় করে। তামাক কোম্পানির এই ব্যবসার প্রায় পুরোটাই তরুণদের লক্ষ্য করে পরিচালিত হচ্ছে, কারণ তরুণরা সিগারেটে অভ্যস্ত হলে তামাক কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী ভোক্তা তৈরি হবে যা তাদের মুনাফা বহুগুণে বৃদ্ধি করবে।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সরকার মূল্য ও কর বৃদ্ধি করলেও খুচরা শলাকা বিক্রি হওয়ায় বিশেষ করে তরুণদের মাঝে এই বৃদ্ধির কোনো প্রভাব পড়ছে না। বরং খুচরা সিগারেট বিক্রি এবং সর্বোচ্চ খুচরা শলাকার চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করে তামাক কোম্পানি বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। ফলে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধের কোনো বিকল্প নেই। একইসঙ্গে এমআরপিতে সিগারেট বিক্রি নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া, ভ্রাম্যমাণ তামাকজাত দ্রব্য বিক্রেতাদের জন্য কোনোপ্রকার লাইসেন্সিং ব্যবস্থা না থাকায় সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা অনেকাংশেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক লাইসেন্সিং এর বিধান করা হলে তা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও মনিটরিং ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিশ্চিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলেও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) জানিয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সরকার ই-সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধ করলেও তামাক কোম্পানি দেশের ভিতরে উৎপাদন করার পাঁয়তারা করছে। সেজন্য তারা তরুণদের মধ্যে ই-সিগারেটের পক্ষে জনমত তৈরিতে প্রচারণা চালাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ই-সিগারেটের ব্যবহার বৃদ্ধিতে তামাক কোম্পানি ব্যাপকভাবে তরুণদের আকর্ষণে অর্থ বিনিয়োগ করছে। বিশ্বের প্রায় ৪০টির বেশি দেশ ইতোমধ্যে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করেছে, ফলে বাংলাদেশকেও তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে হবে।

তামাক কোম্পানিগুলো মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ায় যে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা হলে রাজস্ব আয় কমে যাবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ নষ্ট হবে। অথচ ২০০৫ সালের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস এবং ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করার পরও গত ১৮ বছরে তামাক থেকে রাজস্ব আয় প্রায় সাড়ে ১১ গুণ বেড়েছে এবং তামাকের ব্যবহার প্রায় ১৮% কমেছে। তাই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও তরুণদের রক্ষায় তামাক কোম্পানি কর্তৃক আইন ভঙ্গের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা না দেখিয়ে বেপরোয়া আচরণকারী বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।


আরও পড়ুন