পার্কভিউ হাসপাতালে অভিযানে সিভিল সার্জনের বাঁধায় ক্যাব'র ক্ষোভ
প্রকাশিত: ৯-৭-২০২৫ বিকাল ৫:১৪
চট্টগ্রামে বেসকারী হাসপাতাল পার্ক ভিউ হাসপাতালে অনিয়ম তদন্তে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা কালে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা আখতারের হোয়াটসঅ্যাপ কলে হুমকি প্রদান ও অভিযান পরিচালনায় বাঁধা প্রদানের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ক্যাব) । এই ঘটনাকে “সর্ষের ভেতর ভুত” অভিহিত করে অবিলম্বে এঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করছেন সংগঠনটির চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ।
বুধবার (৮ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন ক্ষোভের কথা জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ন সম্পাদক মোঃ সেলিম জাহাঙ্গীর, দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, যুব ক্যাব মহানগর সভাপতি আবু হানিফ নোমান, পলিসি ইনফ্লুয়েন্স গ্রুপ চট্টগ্রামের সভাপতি কলামিস্ট মুসা খান, সদস্য সচিব আবু মোশারফ রাসেল ও যুগ্ন সদস্য সচিব সাঈদুর রহমান মিন্টু প্রমুখ।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ০৮ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে পার্কভিউ হাসপাতালে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুমা আক্তার কণার নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে যান সদর সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান মাহমুদ ডালিম ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রোমানা আক্তার, সিভিল সার্জনের কর্মকর্তা ডা. শিব্বির আহমেদ প্রিন্স, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং ক্যাবের প্রতিনিধি আবু হানিফ নোমানসহ অন্যান্যরা। অভিযানকালে পার্কভিউ হাসপাতালের নানান অনিয়ম ধরা পড়ে। টেস্টের তালিকার মূল্য চার্টে অনেক টেস্টের নাম উল্লেখ নেই। টেস্টের মূল্য তালিকা দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শিত ছিলো না। যা ছোটখাটো ক্যালেন্ডারে ছিলো। হাসপাতালের রোগীদের খাবার প্রস্তুতকরণের জায়গা অর্থাৎ রান্নাঘর অপরিস্কার ও অপরিছন্ন, অস্বাস্থ্য-পরিবেশে রান্নার করার প্রমাণ পাওয়া যায়। রেফ্রিজারেটরে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা মাংস ও অনিরাপদ খোলা ভোজ্য তেলের ট্যাংক অভিযানকালে ধরা পড়ে। পাশাপাশি বিএসটিআই কর্তৃক অনুমোদনহীন দইয়ের সন্ধান পাওয়া যায়। যা রোগীদের জন্য সম্পূর্ণ অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ।
অভিযানকালে হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপ ফোনকলে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বাকলিয়া সার্কেলের এসিল্যান্ড ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিট্রেটকে উদ্দেশ্য করে উচ্চস্বরে বলেন, কার পারমিশনে পার্কভিউ হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করছেন। ওইসব দেখার দায়িত্ব আমার। কোনো জরিমানা করবেন না। জরিমানা করা হলে আপনার বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে। পাশাপাশি সিভিল সার্জনের প্রতিনিধিকেও তিনি ফোনকলে শাসান। পাশে দাড়িয়ে থাকা ক্যাবের প্রতিনিধি আবু হানিফ নোমান ও সদর সার্কেলের এসিল্যান্ড এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান মাহমুদ ডালিম ও অন্যান্যরা হতবাক হয়ে পড়েন। উক্ত অনিয়মসমূহ এক সপ্তাহের মধ্যে সংশোধনের জন্য অভিযানের নেতৃত্বে থাকা বাকলিয়া সার্কেলের এসিল্যান্ড ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিট্রেট মাসুমা আক্তারের নিকট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষে জিএম তালুকদার জিয়াউর রহমান মুচলেকা প্রদান করেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা অত্র হাসপাতালে পরিবেশের নিয়ম বিঘ্নিত হওয়ায় শোকজ নোটিশ প্রদান করেন। ক্যাবের প্রতিনিধি আবু হানিফ নোমান জানান, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে ফোনকলে সিভিল সার্জনের এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ নিন্দনীয়। একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে সরকারি কাজে বাধা প্রদান করা যা সরকারি আচরণবিধি নিয়মানুযায়ী চরমভাবে লঙ্ঘন করে। রাষ্ট্রীয় কাজে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের এহেন নিন্দনীয় ও গর্হিত ভূমিকা এবং হস্তক্ষেপের প্রতি তিনি নিন্দা জানান। সুষ্ঠু তদন্তের সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবি জানান।
এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, সিভিল সার্জনের অনুমতি নিয়ে কী তাহলে বেসরকারী হাসপাতাল ও ডায়গনিস্টকগুলি মানুষের পকেট কাটছে আর স্বাস্থ্য বিভাগ নিরব দর্শক। তারা মাসিক মাসোহারার ভিত্তিতে এধরনের গলাকাটা বিল আদায় করছে। আর সরকারের অন্যকোন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে গেলে সেখানে বাধা প্রদান করছে। তারা অবিলম্বে সিভিল সার্জনের এধরনের ঘটনার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেন।