ফ্যাসিবাদমুক্ত সিবিএ কমিটি চান সোনালী ব্যাংক কর্মচারীরা
প্রকাশিত: ৯-৭-২০২৫ দুপুর ৩:৪৫
সোনালী ব্যাংক পিএলসি রাজশাহী অঞ্চলের শ্রমিক দল অন্তর্ভুক্ত ব্যাংক পেশাজীবী সংগঠন সিবিএ'র (বি-৬৬৪) সদ্য বিলুপ্ত কমিটির নেতৃবৃন্দ "আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসিত" নতুন কমিটি বাতিল করে পূর্বের কমিটি বহাল রাখাসহ বেশ কিছু দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
আজ বুধবার (৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ৩টায় রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সোনালী ব্যাংক পিএলসি রাজশাহী অঞ্চলের শ্রমিক দল অন্তর্ভুক্ত ব্যাংক পেশাজীবী সংগঠন সিবিএ'র সদ্য সাবেক সভাপতি আহসান হাবিব। তিনি বলেন, "মাত্র সাত মাসের ব্যবধানে কোনো কারণ ব্যতিরেকেই আমাদের কমিটি সোনালী ব্যাংক পিএলসি সিবিএ'র কেন্দ্রীয় কমিটি আকস্মিক এবং অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করে। তাদের এহেন কর্মকাণ্ডে আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়ে আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে বিএনপির স্থায়ী কমিটির কাছে আবেদন জানাচ্ছি যেন বর্তমান কমিটি বাতিল ঘোষণা করে পূর্বের কমিটি বহাল রাখেন।"
আহসান হাবিব আরও বলেন, "আমার দীর্ঘ চাকুরি জীবনে আমি বরাবরই বিএনপির পেশাজীবী ও শ্রমিক দলের রাজনীতির সাথে জড়িত। বিএনপির দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত কর্মী হিসেবে আমার কমিটি কোন প্ররোচনায় এবং কিসের স্বার্থে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো তা জানতে চাই। আজকের এই সংবাদ সম্মেলন শুধুমাত্র আমার কমিটি রক্ষার জন্য নয়, বর্তমান কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের বিএনপিতে পুনর্বাসন এবং অনুপ্রবেশ ঠেকানো আর বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারীদের মুখোশ উন্মোচন করার জন্য।"
তিনি ব্যাখ্যা করেন কেন বর্তমান কমিটি বাতিল করা প্রয়োজন। তার মতে, বর্তমান কমিটিতে ২৬ জন খণ্ডকালীন কর্মচারীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা নিয়ম পরিপন্থী। কারণ স্থায়ী কর্মচারী ব্যতীত কেউ কমিটিতে স্থান পাবে না। তাই তাদেরকে স্থায়ী কর্মচারীর ভুয়া পদবি দিয়ে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা ব্যাংক আইনের পরিপন্থী এবং কমিটির নামে প্রহসন। বর্তমান কমিটির মধ্যে ৫ জন বিগত স্বৈরাচারী হাসিনার ১৭ বছরের শাসনামলে ব্যাংকের বিভিন্ন বদলি বাণিজ্য, অসদাচরণ, অর্থের বিনিময়ে সুযোগ-সুবিধা প্রদান, চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন আওয়ামী সমর্থক ব্যবসায়ীদেরকে যোগ্যতার চেয়ে অধিক পরিমাণ লোন সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার মতো জঘন্য কর্মকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত ছিল। এদের মধ্যে অন্যতম আব্দুল আউয়ালকে বর্তমান কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। এই আউয়ালকে বিগত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে আওয়ামী দোসর হিসেবে পাবনায় বদলি করা হয়েছিল। কিন্তু সিবিএ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জাকির হোসেন কিসের স্বার্থে তাকে সভাপতি করে পুনরায় জিএম অফিস, রাজশাহীতে বদলি করে আওয়ামী লীগের দোসরদের পুনর্বহাল এবং বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করার সুযোগ করে দিলেন, তার ব্যাখ্যা উপস্থিত সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে জানতে চাই।
"কোন আওয়ামী লীগ দোসরকে বিএনপিতে জায়গা দেওয়া হবে না" বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এমন ঘোষণার পরেও এহেন কর্মকাণ্ডের জন্য বিএনপির দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য আপনাদের মাধ্যমে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপের জোরালো দাবি জানাচ্ছি। অপরদিকে, উক্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে খণ্ডকালীন সুইপার শ্রী নরেশকে দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে সোনালী ব্যাংকের মতো একটি বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ এবং বিএনপির দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে তারা মনে করেন। কথিত আছে, মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সিবিএ'র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জাকির হোসেন এই দুইজনকে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি প্রদান করেন, যা ঘৃণাভরে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি এবং উক্ত কমিটি স্থগিত ঘোষণা করে পূর্বের কমিটি পুনর্বহাল করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
তারা সাংবাদিকদের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ, কেন্দ্রীয় সিবিএ বি-৬৬৪ কর্তৃপক্ষ, রাজশাহীর স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির কাছে আবেদন করেছেন যেন আওয়ামী দোসরদের বিএনপিতে অনুপ্রবেশ এবং পুনর্বহাল রোধ করা হয় এবং বিএনপির পাশাপাশি ব্যাংকেরও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারীদের শাস্তির আওতায় এনে বর্তমান কমিটি স্থগিত ঘোষণা করে পূর্বের কমিটি পুনর্বহাল রাখার জন্য দূরদর্শী এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পরিশেষে বিএনপিতে আওয়ামী দোসরদের অনুপ্রবেশের তীব্র প্রতিবাদ জানান তারা।
এ সময় সোনালী ব্যাংক পিএলসি রাজশাহী অঞ্চলের শ্রমিক দল অন্তর্ভুক্ত ব্যাংক পেশাজীবী সংগঠন সিবিএ'র সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, নির্ধারিত স্থানে অর্থাৎ সোনালী ব্যাংকের হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেননি তারা। বর্তমান কমিটি তাদেরকে হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করতে দেয়নি, হামলা চালিয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তারেক রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত ব্যানারও ছিঁড়ে ফেলেছে। তারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং পরবর্তীতে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আইনী প্রক্রিয়ায় যাবেন বলেও জানান।