বড়লেখায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে হাজারো মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা; চরম জনদুর্ভোগ

news paper

বড়লেখা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৯-৭-২০২৫ দুপুর ৩:৪২

11Views

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পৌরসভাধীন ৬ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ পানিধার এলাকার হাজারো মানুষের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এই এলাকায় বসবাসরত কয়েক'শ পরিবার।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পৌরসভার দক্ষিণ পানিধার এলাকার তলিয়ে যাওয়া রাস্তা দিয়ে কয়েক'শ পরিবারের হাজারো মানুষের যাতায়াত। সড়কটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নিকুড়ি গাঙের ছড়া। মাসখানেক আগে পাহাড়ি ঢল আর আকস্মিক বন্যায় পুরো গ্রাম তলিয়ে গিয়েছিল। গাঙের পানির তীব্র স্রোতে এলাকার কয়েক'শ পরিবারের যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি উপজেলা শহরের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সড়কটির প্রায় ৪০ ফুট জায়গা গাঙের পানির সাথে তলিয়ে যায়।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যায় নিকুড়ি গাঙটির প্রবল স্রোতে তলিয়ে গিয়েছে দক্ষিণ পানিধার এলাকার এই সড়ক। এতে করে এলাকায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটির পাশেই রয়েছে একটি এতিমখানা মাদ্রাসা। যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি ভাঙার কারণে এতিমখানার কোমলমতি শিশুদের মাদ্রাসায় আসতে অনেক অসুবিধা দেখা দিয়েছে। ছোট ছোট বাচ্চারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া করছে। এছাড়াও এই সড়কটি দিয়ে অসুস্থ রোগীদের নিয়ে যাওয়া খুবই দুঃসাধ্য। বৃদ্ধ লোকদের কোলে ও কাঁধে করে নিয়ে সড়কের ভাঙা অংশ পাড়ি দিতে হয়। একটু বৃষ্টি হলেও পানি জমে সড়কটি বন্ধ হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, চিকিৎসক সহ বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। স্থানীয়রা হেঁটে চলাচল করার জন্য বস্তা ভরে মাটি দিয়ে ভাঙা অংশে ফেলে কোনোভাবে যাতায়াত করছেন। পাশাপাশি গাঙের পানি না ঢোকার জন্য বাঁশের খুঁটি পুঁতে সীমানা দিয়েছে এলাকাবাসীরা।

জানা যায়, বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে যে পাহাড়ি ঢল নেমে আসে তা এসে পড়ে নিকুড়ি গাঙে। এছাড়াও মুছেগুল, হিনাইনগর, গৌরনগর, কাঁঠলতলী, বরইতলী, মাধবকুণ্ড, ডিমাই, পাখিয়ালা, পানিধার, কেছরীগুল, শিক্ষারমহল সহ আরও বিভিন্ন এলাকার পানি নিকুড়ি গাঙে এসে পড়ে। যখনই অতি বৃষ্টি বা পাহাড়ি ঢল নামে তখন নিকুড়ি গাঙের ছড়াটি আর পানি ধরে রাখতে পারে না। এতে করে গাঙের ওপর দিয়ে প্রবল স্রোতে পানি প্রবাহিত হয়। পরে দেখা দেয় গাঙের পাড় ভাঙ্গন ও তলিয়ে যায় গ্রামটির একমাত্র রাস্তা।

দক্ষিণ পানিধার গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ, মো হোসাইন ও আজিম উদ্দিন বলেন, "আমাদের নিকুড়ি গাঙের পাড়ের সড়কটি বন্যার পানিতে ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। এখানে ২টি মসজিদ, ১টি এতিমখানা ও কয়েক'শ পরিবার রয়েছে। বাচ্চাদের স্কুলে আসা-যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। একমাত্র চলাচলের রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছি। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যেতে সমস্যা হয়। রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় চলাচলে কষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া সড়কটি ভাঙার ফলে এলাকায় একটি মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, সিএনজি পর্যন্ত যেতে পারে না। অসুস্থ রোগীদের হাসপাতাল নিতে অনেক কষ্ট হয়। বাড়িতে একটি চালের বস্তা নিয়ে কতটুকু পরিশ্রম করতে হয় তা বলার মতো নয়। আমরা এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন, আমাদের এই সড়কটি যেন দ্রুত সংস্কার করে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে সহায়তা করেন।"

পানিধার হযরত আবু বক্কর ছিদ্দিক (রা) মাদ্রাসার হিফয বিভাগের শিক্ষক বলেন, "আমাদের মাদ্রাসাতে নুরানী ও হিফয শাখা রয়েছে। এখানে অনেক ছোট ছোট বাচ্চারা লেখাপড়া করে। সড়কটি ভাঙার পর থেকে অনেক পরিবার তাদের বাচ্চাকে মাদ্রাসায় দিতে চাচ্ছে না। কেননা তাদের বাচ্চারা এই ঝুঁকিপূর্ণ সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে অনেকবার আহত হয়েছে। বড়রাও বৃষ্টির সময় যাতায়াত করতে গিয়ে পড়ে যান। তাই আমরা সড়কটির দ্রুত সংস্কার চাই।"

৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সমাজসেবক শাহরিয়ার ফাহিম বলেন, "দক্ষিণ পানিধারের এই অঞ্চলটি একটি জনবহুল এলাকা। দীর্ঘদিন থেকে রাস্তাটি প্রায় বন্ধ। আমি স্থানীয়দের নিয়ে সড়কটি সংস্কারের জন্য পৌর প্রশাসক ও ইউএনও মহোদয় বরাবর একটি লিখিত দরখাস্ত দিয়েছি। এই এলাকায় অনেক ছোট ছোট বাচ্চারা রয়েছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমি কর্তৃপক্ষের নিকট জোর আবেদন জানাচ্ছি যে, এই এলাকার বৃদ্ধ, শিশু, অসুস্থ রোগী, শিক্ষার্থী সহ সকল মানুষের কথা চিন্তা করে দ্রুত যেন সড়কটি মেরামত করা হয়।"

উপ-সহকারী প্রকৌশলী দেবজিৎ চন্দ্র দাস জানান, "আমি সড়কটি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, সেখানের ভাঙা সড়কটি একেবারে চলাচলের অনুপযোগী। সড়কটি সংস্কারের জন্য আগে রাস্তার পাড় গার্ডওয়াল দিয়ে পরে কাজ করতে হবে। এর জন্য বড় বাজেট ও অনেক সময়ের প্রয়োজন। আপাতত চলাচলের উপযোগী করে তুলতে মাটি ভরাট করতে হবে। জনস্বার্থে সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"

এ বিষয়ে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার জানান, "বন্যার কারণে ভাঙা সড়কটি নিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে দরখাস্ত পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। সড়কটি সংস্কারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"


আরও পড়ুন