মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও নার্স ঘাটতি: সেবা ব্যাহত, রোগীরা হতাশ
প্রকাশিত: ৯-৭-২০২৫ দুপুর ১২:৫০
চিকিৎসক ঘাটতিসহ তীব্র জনবল সংকটে ভুগছে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে এর সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট, ফিল্ড স্টাফ সহ বিভিন্ন পদ শূন্য রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসাসেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও নার্স-কর্মচারী সংকটে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।
২০২৩ সালে ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও স্থানীয়রা প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছে না। পার্শ্ববর্তী উপজেলা সহ প্রায় ৮ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার ভরসাস্থল এই হাসপাতাল।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র থেকে জানা গেছে, ১০০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ২১ জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদ থাকলেও আবাসিক কর্মকর্তাসহ বর্তমানে মাত্র ৪ জন কর্মরত আছেন। পর্যায়ক্রমে তাদের দিয়েই জরুরি ও অন্তঃবিভাগের কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ২০১৪ সাল থেকে ২ জন চিকিৎসক অনুপস্থিত রয়েছেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ছাত্রদের চিকিৎসার জন্য একজন অন্যত্র প্রেষণে রয়েছেন। আরও একজন চিকিৎসক নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে আছেন। চিকিৎসক সংকটের কারণে ছোট ছোট সমস্যাতেও রোগীদের নেত্রকোণা কিংবা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক রোগীকে কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে অন্যত্রে রেফার্ড করছে।
আজ বুধবার সরেজমিনে হাসপাতালটি ঘুরে দেখা যায়, বহির্বিভাগে নারী, শিশু সহ বিভিন্ন বয়সের রোগীদের দীর্ঘ লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর চিকিৎসক দেখাতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন অনেকেই।
হাসপাতাল নার্স ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি হাওর বেষ্টিত খালিয়াজুরী, মদন, বারহাট্টা, কারমাকান্দা, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, জামালগঞ্জ, তাহেরপুর, সাছনা সহ অদূরবর্তী এলাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অবস্থান। ছোট-বড় দুর্ঘটনায় দ্রুত চিকিৎসার জন্য আহতদের এই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় তাদের নেত্রকোণা কিংবা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠানো হয়। এতে পথেই অনেক সময় রোগীর মৃত্যু ঘটে।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা: জান্নাতুন নেছা ও ডেন্টাল সার্জন মাহবুবা আক্তার আঁখি বলেন, "এসব ঘাটতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে অনেকেই নিরুপায় হয়ে জেলা কিংবা প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে ব্যয় ও ভোগান্তি দুইটাই বাড়ছে।"
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোঃ মোমেনুল ইসলাম বলেন, "এই সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা প্রদান কঠিন হয়ে পড়েছে। আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তাসহ হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। পোস্ট হিসেবে ২৮ জন থাকলেও, ২১ জন চিকিৎসকের মধ্যে সব মিলিয়ে ৪ জন আছেন। তাদের দিয়েই জরুরি ও অন্তঃবিভাগের কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ছাত্রদের চিকিৎসার জন্য এসেসমেন্টে একজন অন্যত্র রয়েছেন। নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে আছেন একজন। সবগুলো সাপোর্ট থাকলে আরও ভালো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতো। যেমন: ডাক্তার, নার্স, স্টাফ যদি যথাযথ পরিমাণে থাকত, তাহলে যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা আছে তা প্রয়োগ করে চিকিৎসা সেবার মান আরও বৃদ্ধি করা যেত।"
হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করা না গেলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।