আইনশৃঙ্খলার অবনতি: রায়গঞ্জে দেড় মাসে ৩৩টি গরু চুরি
প্রকাশিত: ৮-৭-২০২৫ বিকাল ৫:২২
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ করে গরু চুরি বেড়ে গেছে। গত দেড় মাসের ব্যবধানে কৃষকের ৩৩টি গরু চুরি হয়েছে, যার কারণে গরু মালিক ও খামারিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
অনেক গরু মালিক রাত জেগে নিজেদের গরু পাহারা দিচ্ছেন। কেউবা আবার গরু হারিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে চুরি হওয়া গরু খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তবে চুরি হওয়া গরুর কোনো সন্ধান না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন সাধারণ কৃষক ও খামারিরা। সাম্প্রতিক এই চুরির ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, রায়গঞ্জে গরু চোরদের মদদ দিচ্ছে কারা? রায়গঞ্জ উপজেলা প্রশাসন জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে কেন? মানুষের নাকের ডগা থেকে লাখ লাখ টাকার গরু নিয়ে যাচ্ছে, অথচ চোরদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না!
গত এক মাস ২৩ দিনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, উপজেলা জুড়ে ৩৩টি গরু চুরি হয়েছে। পরে ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন সন্দেহমূলক স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও গরুগুলোর কোনো সন্ধান পাননি। এ ঘটনায় স্থানীয় খামারি সহ এলাকাবাসী আতঙ্কে রয়েছেন। গরু চুরির ঘটনায় থানায় জিডিও করেছেন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের ডুমরাই এলাকা থেকে পৃথক রাতে তিন কৃষকের ১৬টি, একই ইউনিয়নের পশ্চিম লক্ষীকোলা এলাকা থেকে দুই কৃষকের ২টি, মোজাফফরপুর এলাকা থেকে পৃথক রাতে ৬টি, ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের কয়ড়া এলাকা থেকে ১টি, সোনাখাড়া ইউনিয়নের সোনাখাড়া এলাকা থেকে ৬টি, এবং একই ইউনিয়নের গোপালপুর এলাকা থেকে ২টি সহ মোট ৩৩টি গরু চুরি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, গত ১৫ জুন থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত এই চুরিগুলো হয়েছে, যার ফলে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। চুরি যাওয়া গরুর মালিক ডুমরাই গ্রামের আব্দুল কাদের মির্জা জানান, "আমাদের বড় একটি সম্বল গরু। এক রাতে চোরচক্র আমাদের সব গরু নিয়ে গেলো। এটি একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। থানায় অভিযোগ দিয়েও গরুগুলোর কোনো সন্ধান না পেয়ে এখন হতাশায় ভুগছি।" গরু হারিয়ে একই এলাকার আব্দুল মজিদ খান বলেন, "গরুগুলো ছিল আমাদের সংসারের একমাত্র অবলম্বন। রাতে গরুগুলো গোয়াল ঘরে রেখে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে উঠে দেখি গোয়ালঘরের তালা ভাঙা আর ভেতরে গরু নেই।" এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সচেতন মহল বলছেন, গত ৫ আগস্টের পর রায়গঞ্জে এতো খারাপ সময় আসেনি। গত দুই মাস ধরে চোরের উপদ্রব দিন দিন যেন বেড়েই চলছে। তারা বলছেন, বর্তমানে সবদিক মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক বিক্রি ও সেবন বেড়ে যাওয়ার পিছনে থানা পুলিশের অবহেলা প্রধান কারণ।
রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম মাসুদ রানা বলেন, "গরু চুরির ঘটনায় কিছু ভুক্তভোগী থানায় মামলা ও সাধারণ ডায়েরি করেছেন। গরু চুরির বিষয়ে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।" তিনি আরও বলেন, "চূড়ান্তভাবে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই।" তবে খামারি ও কৃষকদের অবহেলাতেও এমন ঘটনা ঘটেছে দাবি করে তিনি সকলকে আরও সচেতন হওয়াসহ নিজ দায়িত্বে গরুগুলোকে দেখভালের আহ্বান জানান।