অতি ভারী বর্ষণে পটুয়াখালীতে জনজীবনে চরম ভোগান্তি, তলিয়ে গেছে বহু রাস্তাঘাট
প্রকাশিত: ৮-৭-২০২৫ দুপুর ৪:৬
বিগত চার-পাঁচ দিনের টানা বৃষ্টি এবং অতি ভারী বর্ষণে পটুয়াখালী শহরের অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গতকাল রাত থেকে একটানা বৃষ্টির ফলে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও আশপাশের এলাকাগুলো হাঁটুসমান পানিতে ডুবে যায়। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর সক্রিয়তার কারণে পটুয়াখালীতে মাঝারী থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে বলে জানিয়েছে পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস। এতে পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন নিচু স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, যা খেটে খাওয়া মানুষের চরম ভোগান্তির কারণ হয়েছে।
শহরের পুরানবাজার, সদর রোড, চরপাড়া, জুবিলী সড়ক, মহিলা কলেজ, কালেক্টরেট স্কুল, কলেজ রোড, এসডিও রোড, পোস্ট অফিস সড়ক, সবুজবাগ, তিতাস সিনেমা হল, নতুন বাজার, ওয়েল মিল সড়ক, আব্দুল হাই বিদ্যানিকেতনসহ বিভিন্ন এলাকায় বসতবাড়ি ও দোকানঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। অতি ভারী বৃষ্টিতে ক্লাসরুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় শেরেবাংলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আজকের অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে শহরের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট করে স্কুল-কলেজে পৌঁছাতে দেখা গেছে। অফিসগামী মানুষকেও পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। রাস্তাঘাটে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, বিশেষ করে রিকশাচালক ও দিনমজুরদের রোজগারে বড় প্রভাব পড়েছে।
পটুয়াখালী পৌরসভার কর্মকর্তারা জানান, শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পানি নিষ্কাশনের কাজ চলছে এবং ড্রেন পরিষ্কার করা হচ্ছে। তবে টানা ভারী বর্ষণের কারণে পানি দ্রুত নামছে না এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। পৌরসভার স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে পৌরসভার সেমি-আধুনিক ড্রেন পরিষ্কারের যন্ত্র ও তিন দাঁতের সরঞ্জাম কার্যকর নয়, এতে শুধু উপরিভাগ পরিষ্কার হচ্ছে, কিন্তু ড্রেনের ভেতরের পলি ও ময়লা থেকেই যাচ্ছে। তাদের মতে, আগের কোদাল-বেলচা পদ্ধতি অনেক ভালো ছিল। তারা আরও বলেন, অভ্যন্তরীণ অধিকাংশ ড্রেন বন্ধ হয়ে আছে, কিন্তু কিছু সুপারভাইজার মিথ্যা রিপোর্ট দিচ্ছেন যে "সব পরিষ্কার"—যা সম্পূর্ণ বানোয়াট। নাগরিকরা পৌরকর দিলেও পরিষ্কারের সময় আলাদা করে টাকা চাওয়া হয়। তারা পৌর প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিষয়টি তদন্তপূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান। তাদের অভিযোগ, শুধু দৃশ্যমান ড্রেনগুলোই পরিষ্কার হয়, কিন্তু অভ্যন্তরীণ ড্রেনগুলো যেন অবহেলার চাদরেই নিমজ্জিত থাকে এবং এই জলাবদ্ধতা থেকে পৌর বাসিন্দারা পরিত্রাণ পেতে চান। ব্যবসায়ী হাসান বলেন, "সকালে দোকান খুলে দেখি, ভেতরে পানি। টিভি, পাখা, কাপড় সব নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিবারই একই সমস্যা হয়, কিন্তু কোনো স্থায়ী সমাধান নেই।" রিকশাচালক মজিবর বলেন, "এই কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে পটুয়াখালী পৌরসভার অনেক এলাকার রাস্তা পানিতে তলিয়ে গিয়েছে। এতে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষরা। আমাদের অনেকের রান্নাঘরসহ বাসা বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। অনেকে রান্না করে খাবে সে অবস্থাটাও আমাদের নেই। পানির কারণে রিকশা নিয়ে ঘর থেকে বের হতে পারি না। রাস্তায় কোনো লোকজন নেই। কী করে যে খাব সেই চিন্তাই করতেছি। আল্লাহ জানে এ বৃষ্টি আর কতদিন থাকে।"
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, "সমুদ্রগামী সব ধরনের মাছধরার ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলেছি।" কুয়াকাটা টুরিস্ট পুলিশ জোনের কর্মকর্তা তাপস সাহা জানান, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর। সমুদ্রতটে আছড়ে পড়ছে ছোট-বড় ঢেউ। তারা মাইকিং করে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করছেন এবং সাবধানে থাকতে বলছেন, পাশাপাশি পর্যটকদের রুমে ফেরত পাঠাচ্ছেন। এছাড়া কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশও তাদের সাথে কাজ করছে।
অতি ভারী বৃষ্টির কারণে পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী, গলাচিপা, কলাপাড়া, মির্জাগঞ্জ, দশমিনা, বাউফলে যেসব বেড়িবাঁধ আছে, তা দিয়ে পানি ঢুকে অনেক গ্রাম, ফসলের মাঠ, সবজি বাগান, ধানক্ষেত, মাছের ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। অনেকের আধা কাঁচা ঘর হেলে পড়েছে। সেখানকার লোকজন অতি দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি জানান। আবহাওয়া অফিস উপকূলীয় এলাকা দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছে। তাই পটুয়াখালীর পায়রা সহ দেশের সকল সমুদ্র বন্দরকে ০৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পটুয়াখালী, বরিশাল, খুলনা, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে, তাই এসব নদী বন্দরসমূহকে ০১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।