সাতকানিয়ায় নিষিদ্ধ ইউক্যালিপটাস গাছে সয়লাব, বনবিভাগ নীরব
প্রকাশিত: ৮-৭-২০২৫ দুপুর ২:৫৫
সম্প্রতি পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার ইউক্যালিপটাস গাছের চারা রোপণ, উত্তোলন ও বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মাত্র দুটি নার্সারিতে প্রায় তিন লক্ষাধিক ইউক্যালিপটাস গাছের চারা বেড়ে উঠছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, সরকার কর্তৃক ইউক্যালিপটাস গাছের চারা তৈরি, রোপণ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও ছোট ছোট নার্সারিগুলোতে যে পরিমাণ এই চারা তৈরি হচ্ছে, তাতে সরকারের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগ ব্যাহত হতে পারে। অপরদিকে নার্সারির মালিকরা ভিন্ন কথা বলছেন; তাদের দাবি, সরকার নিষিদ্ধ করার কয়েক মাস আগে থেকে তারা ইউক্যালিপটাস গাছের চারা তৈরির কাজ শুরু করেছেন এবং নার্সারিতে চারা তৈরি হয়ে যাওয়ার পর সরকার এটি নিষিদ্ধ করেছে। তাই চারাগুলো বিক্রি করতে না পারলে লোকসানের মুখে পড়বেন তারা। আবার অনেক নার্সারি মালিক এই গাছ নিষিদ্ধের প্রভাব নার্সারিতে পড়বে না বলে মনে করছেন।
সরেজমিনে উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হলুদিয়া গ্রামের 'ইসমাঈল নার্সারি' ও 'ওসমান নার্সারিতে' গিয়ে দেখা যায়, ইসমাঈল নার্সারির ১৭টি বেডে প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার ইউক্যালিপটাস গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। নার্সারিতে কর্মরত নারী শ্রমিকদের পরিচর্যায় চারাগুলো আপন গতিতে বেড়ে উঠছে। অপরদিকে ওসমান নার্সারিতে গিয়ে দেখা যায়, তার নার্সারির ১৫টি বেডে প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার ইউক্যালিপটাস গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এছাড়াও তার নার্সারিতে আলাদা বেডে ৩০ হাজারের মতো আকাশমনি গাছের চারা রয়েছে।
ইসমাঈল নার্সারির স্বত্বাধিকারী মো. ইসমাঈল হোসেন বলেন, "সরকার ইউক্যালিপটাস গাছের চারা রোপণ নিষিদ্ধ করার কয়েক মাস আগে আমি বেডে বীজ বপন করেছি। এখন চারাগুলো রোপণের উপযোগী হয়ে গেছে। নিষিদ্ধ করার ফলে এই চারা থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিবে। এমতাবস্থায় চারাগুলো বিক্রি না হলে অনেক টাকা লোকসানের মুখে পড়ব।" ওসমান নার্সারির স্বত্বাধিকারী মো. ওসমান বলেন, "নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি যেমন মানুষের আগ্রহ বেশি, ঠিক তেমনি অন্যান্য চারার চাইতে ইউক্যালিপটাস গাছের চারা মানুষ বেশি পছন্দ করেন। কারণ এই গাছ দ্রুতবর্ধনশীল। একবার রোপণ করে কর্তন করার পর সেই গাছ থেকে পুনরায় নতুন গাছের জন্ম হয়। এতে বাগান মালিকরা বেশি লাভবান হন। তাই এই গাছের চারা রোপণ নিষিদ্ধ করা হলেও নার্সারিতে এর প্রভাব পড়বে না বলে মনে হচ্ছে।"
পরিবেশবাদী নাগরিক সংগঠন 'ধরিত্রী রক্ষায় আমরা' (ধরা) এর সমন্বয়ক সানজিদা রহমান বলেন, "ইউক্যালিপটাস গাছ মাটি থেকে অতিমাত্রায় পানি শোষণ করে মাটিকে শুষ্ক করে ফেলে। এতে মাটির আর্দ্রতা কমে যায়, যা খরাপ্রবণ অঞ্চলের মাটির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।" তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এই গাছটি অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের সাথে আঁতাত করে একটি মহল এটি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে সরকারের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগ ব্যাহত হতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত কঠোর আইন প্রণয়ন করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, "সকল পর্যায়ের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে ইউক্যালিপটাস গাছের চারা তৈরি ও রোপণ এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। কিন্তু এই কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িতদের শাস্তি বা জেল-জরিমানা সম্পর্কে এখনো কোনো ধরনের নির্দেশনা আসেনি।" তবে তিনি যোগ করেন যে, ইউক্যালিপটাস গাছ যেহেতু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, সেহেতু তারা নার্সারি মালিকদের এসব গাছের চারা তৈরি না করতে নিরুৎসাহিত করে যাবেন।
প্রসঙ্গত, গত (১৫ মে) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন-১ অধিশাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের চারা তৈরি, রোপণ এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়। এই গাছ দুটি স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূরণে এই দুটি প্রজাতির গাছের চারা তৈরি, রোপণ এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।