পঞ্চগড়ে বিএনপি'র প্রয়াত সভাপতির কবর জিয়ারতে যাওয়ার পথে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা
প্রকাশিত: ৭-৭-২০২৫ দুপুর ৩:৩১
পঞ্চগড়ে জেলা বিএনপি'র সাবেক সভাপতি ও তিন বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রয়াত মোজাহার হোসেনের কবর জিয়ারত করতে যাওয়ার সময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাসুদ রানা রিয়াজের ওপর হামলা চালিয়েছে বিএনপি'র কতিপয় নেতা-কর্মী। রবিবার (৬ জুলাই) বিকেল সোয়া ৩টায় বোদা উপজেলার সাকোয়া বাজারে এই ঘটনা ঘটে। হামলার একটি ভিডিও ইতিমধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে মাসুদ রানা রিয়াজকে এলোপাতাড়ি মারধর করতে দেখা যায় এবং তার পরনের পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলা হয়।
পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে সেখানেই তিনি চিকিৎসা গ্রহণ করছেন।
দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতি করে আসা রিয়াজ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সবুজ সংকেত পাওয়ায় সম্প্রতি পঞ্চগড়-২ আসনের রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন বলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে পঞ্চগড়-২ আসনে বিএনপি'র মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তিনি বর্তমানে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
রবিবার বিকেল সোয়া ৩টায় জেলা বিএনপি'র সাবেক সভাপতি ও তিন বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোজাহার হোসেনের প্রধানপাড়া গ্রামের বাড়িতে কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা ছিল মাসুদ রানা রিয়াজের। একটি ফেসবুক আইডি থেকে শনিবার এই বিষয়ে পোস্ট করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী মাসুদ রানা রিয়াজ বিকেল সোয়া ৩টায় সাকোয়া বাজারে পৌঁছালে বিএনপির কিছু নেতাকর্মী তার পথরোধ করে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে মারধর শুরু করে।
হামলার ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট হলে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের একজন নেতার ওপর এমন হামলা অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সাকোয়া বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন শামীমের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আরও যেসব নাম উঠে এসেছে তারা হলেন— ইউনিয়ন বিএনপি'র সহ-সভাপতি নবিউল ইসলাম ও সবুজ মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল লতিফ, বোদা উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বাবু, সাকোয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইসলাম জীবন, উমমেত হাসান, সাকোয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের আহ্বায়ক আশিক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জসীমসহ আরও অনেকে। এছাড়াও হামলায় অংশ নেওয়া টসা বাবু, শাহীন, রিপন ও তপুলকে এলাকাবাসী বিএনপির কর্মী হিসেবে চিনেন।
বোদা উপজেলা বিএনপি'র সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, "উনি যে ছাত্রদলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা আমি চিনি না। আমাদেরকে অবগত না করেই জেলা বিএনপি'র প্রয়াত সভাপতির কবর জিয়ারতে এসেছিলেন। তাই গতকাল কি ঘটেছিল সেই বিষয়ে আমি পুরোপুরি জানি না।"
এদিকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বোদা উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব জীবন সরকার, বোদা পৌর ছাত্রদলের সভাপতি নাজমুল ইমন, সাকোয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের আহবায়ক মোঃ আশিক এবং যুগ্ম আহবায়ক মোঃ জসিম ইসলামকে সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদ। ধারণা করা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির ওপর হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে তাদের বহিষ্কার করা হয়।
অপরদিকে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান বাবু বলেন, "ঘটনাটি দুঃখজনক। যুবদলের কেউ জড়িত রয়েছে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নই। তবে যুবদলের কেউ এই ঘটনায় জড়িত থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
মাসুদ রানা রিয়াজ বলেন, "পুরো বিষয়টি কেন্দ্র থেকে মনিটরিং হচ্ছে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।"
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, "আমরা ইতিমধ্যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। বিষয়টি বিএনপি'র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছি। রিজভী ভাই বিষয়টি অবহিত আছেন। উনি আশ্বস্ত করেছেন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের। সেই সাথে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও বিষয়টি অবহিত করব।"
এদিকে সোমবার দুপুর ১টার দিকে মাসুদ রানা রিয়াজের উপর হামলার ঘটনায় বিচার চেয়ে সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাত্রদল বিক্ষোভ মিছিল করেছে।