১০ মহররমে ছারছীনার পীর আল্লামা শাহ মোহেব্বুল্লাহ (রহ.)-এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন
প্রকাশিত: ৬-৭-২০২৫ রাত ১০:৪
ছারছীনা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা শাহ সুফি হযরত মাওলানা নেছারুদ্দিন (রহ.) উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক ইতিহাসে এক অনন্য নাম। তার স্থাপিত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে পীর মোহেব্বুল্লাহ (রহ.)-এর পিতা, হযরত মাওলানা শাহ আবু জাফর মোহাম্মদ ছালেহ (রহ.), ছারছীনা দরবারকে এক অভূতপূর্ব উচ্চতায় পৌঁছে দেন। এই মহান পূর্বসূরীদের আদর্শেই বেড়ে ওঠেন আল্লামা মোহেব্বুল্লাহ (রহ.), যিনি নিজ গুণে পরিণত হন আধ্যাত্মিকতা, প্রজ্ঞা, মানবতা এবং রাষ্ট্রচিন্তার এক দুর্লভ প্রতিমূর্তিতে।
পীর সাহেব এমন এক আধ্যাত্মিক রাহবার ছিলেন, যিনি তার অনুসারীদের ব্যক্তিগত অবস্থা বুঝতেন অদ্ভুত প্রজ্ঞায়। তিনি একাই প্রায় ৩৫০০ দ্বীনি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার পিতা ও দাদার মাধ্যমে এই সংখ্যাটি প্রায় ৮০০০-এ পৌঁছে যায়। বাংলাদেশে ইসলামি শিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় এই পরিবারটির অবদান অনস্বীকার্য।
যদিও তিনি দলীয় রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত ছিলেন না, তবুও দেশের রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সকলেই তার কাছে পরামর্শ ও দোয়ার আশায় আসতেন। তিনি ছিলেন ইসলাম, রাষ্ট্র ও মানবতার স্বার্থে একটি নিরপেক্ষ, দৃঢ় এবং ভারসাম্যপূর্ণ কণ্ঠ। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর আমির, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মুদাররেসিনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, এবং মসজিদে গাউসুল আজম কমপ্লেক্সের মুতাওয়াল্লী।
মৃত্যুর কিছু মাস আগেই এক মাহফিলে তিনি বলেছিলেন, "এই মাহফিলই হয়তো আমার শেষ মাহফিল।" সেই কথার ঠিক এক বছর পর, আল্লাহর অনুপম ব্যবস্থাপনায় তিনি ১০ই মহররমে ইন্তেকাল করেন। তার জানাজা দেশের ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম জনসমাবেশে পরিণত হয়—যেখানে রাষ্ট্রীয় বাধা, চলমান অবরোধ বা মাইকিং-এর সীমাবদ্ধতাও জনস্রোত থামাতে পারেনি।
মরহুম পীর সাহেবের ইন্তেকালের পর, ছারছীনা দরবারের বর্তমান পীর হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন তার উত্তরসূরি, শাহ আবু নছর নেছারুদ্দিন আহমদ হোসাইন (মা. জি. আ.)। তার নেতৃত্ব ইতোমধ্যেই দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে এবং জনমানুষের আস্থা, ভালোবাসা ও ইসলামি জাগরণে নতুন আশার আলো ছড়াচ্ছে।
আল্লাহ তায়ালা এই মহান অলিকে জান্নাতুল ফিরদাউসের সর্বোচ্চ মাকামে আসীন করুন, এবং আমাদেরকে তার দেখানো হক ও ইখলাসের পথে অবিচল রাখুন। আমিন।