জবির অত্যাধুনিক মেডিকেল সেন্টার: নাপা-প্যারাসিটামল ছাড়া মিলেনা আর কিছু

news paper

ইউছুব ওসমান, জবি

প্রকাশিত: ১২-৯-২০২১ দুপুর ১১:৫২

15Views

নামে আধুনিক মেডিকেল সেন্টার হলেও বাস্তবে আধুনিকতার ছিটেফোঁটাও নেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মেডিকেল সেন্টারে। পাশাপাশি ডাক্তারদের নানা অনিয়ম, সময়মতো অফিসে না আসা এবং অফিসের সময় শেষ না করে চলে যাওয়াই যেন একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে এখানে। এমনকি প্রায়সময়ই খুঁজে পাওয়া যায়না কোনো ডাক্তারকেও। নামফলকে অত্যাধুনিক শব্দটা যুক্ত থাকলেও সেবার মান একেবারেই নাজুক। এ নিয়ে অভিযোগ এবং আক্ষেপের যেন শেষ নেই বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের।
 
জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারটি আগে আরো সংকীর্ণ অবস্থায় ছিলো। এখানে চিকিৎসা নিতে গিলে প্যারাসিটামল, ঠান্ডা ও কাশির ওষুধ ছাড়া আর কোনো ওষুধই মিলতো না কারো। ছিলো না কোনো প্রকার মেশিন, প্যাথলজি বিভাগ বা কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থাও।
 
শিক্ষার্থীদের কয়েকদফা আন্দোলন, অনশনের পর তাদের দাবির মুখে মেডিকেল সেন্টারটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত বছরের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচ তলায় অত্যাধুনিক মেডিকেল সেন্টার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তবে কোনো রকম আধুনিক যন্ত্রাদি এবং পরীক্ষাগার ছাড়াই নামমাত্র অত্যাধুনিক শব্দ ব্যবহার করে তড়িঘড়ি করে এর উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপাচার্য 
 
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, মেডিকেল সেন্টারটিতে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কয়েকটি উপকরণ থাকলেও আধুনিকায়নের জন্য রক্ত পরীক্ষা, ইসিজি কক্ষ ও বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল সরঞ্জামাদি, পিসিআর ল্যাব, আইসিইউ স্থাপনের পরামর্শ দেন প্রশাসন। গত বাজেটে যন্ত্রাদি কেনার বাজেট থাকলেও তার বাস্তবায়ন না করেই সেই টাকা ইউজিসিতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, মেডিকেল সেন্টারটিতে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে মাত্র একজন ডাক্তার। মেডিকেল সেন্টার পরিচালনায় তিনজন ডাক্তার নিয়োগ দিলেও দুজন ডাক্তার নিয়মিত আসেন না। এতে বর্তমান কর্মরত ডাক্তার ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
 
বিজ্ঞান অনুষদের স্নাতকের শিক্ষার্থী রবিউল বলেন, আমি দুইদিন চিকিৎসা নিতে গিয়ে ঘুরে এসেছি। কোনো ডাক্তারকে পাইনি। আধুনিকত শুধু নামেই, বাস্তবে নাপা-প্যারাসিটামল ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়না এখানে।
 
কলা অনুষদের শিক্ষার্থী সুফিয়ান বলেন, প্রচণ্ড অসুস্থ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলাম। সেখানে কোনো টেস্টের ব্যবস্থাও নেই। পরে বাইরে থেকে টেস্ট করিয়ে চিকিৎসা নিয়েছি। সেখানে কোনো ডাক্তারকেও সময়মত পাওয়া যায়না।
 
আইন অনুষদের শিক্ষার্থী নাফিসা বলেন, আমার বান্ধবী এক্সিডেন্ট করায় মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাটাও ঠিক মতো নেই। আমাদেরকে ওষুধও দিতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যাধুনিক মেডিকেল সেন্টারের এমন নাজুক অবস্থা হলে আমরা কোথায় যাবো?
 
এবিষয়ে জানতে চাইলে মেডিকেল সেন্টারের ডাক্তার মিতা শবনম বলেন, ২০ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য শুধু আমিই একা আছি ডাক্তার হিসাবে। মাঝে মাঝে রোগীর চাপ এত থাকে যে, একা হিমশিম খেতে হয়। অন্যদিকে চিকিৎসা নিতে আসা শিক্ষার্থীরাও পড়েন ভোগান্তিতে। বাকি দুইজন ডাক্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য দুইজন ডাক্তার নিয়োগ প্রাপ্ত হলেও উনারা অফিসে নিয়মিত আসেনা। সব কিছু আমাকে একাই করতে হয়।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যান দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, আমরা মেডিকেল সেন্টারের বিষয়টা নিয়ে ভাবছি। অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য যেনো শিক্ষার্থীরা ভালো মানের সেবা পায় সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
 
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, মেডিকেলের এ অবস্থার কারণ কি এ বিষয়ে আমার কাছে কোন জবাব নেই। আর আমরা শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়েই টিকা গ্রহণের একটা ব্যবস্থা করছি।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলের ডাক্তারের অনিয়মিতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন রিজাইন নিবে, সেজন্য দরখাস্ত দিয়েছে। কিন্তু আরেকজন কেনো নিয়মিত আসছে না আমি জানিনা। আমার কাছে ছুটির কোনো দরখাস্তও আসেনি।

আরও পড়ুন